প্রকাশিত: Fri, Aug 2, 2024 10:54 AM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 2:29 AM

[১]বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই: প্রধানমন্ত্রী

ইকবাল খান: [২] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, জাতি কোটা বিরোধী আন্দোলনের ছদ্মবেশে জঙ্গিবাদের বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। 

[৩] তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবে না। তাদের প্রধান শক্তি জামায়াতে ইসলাম ও শিবিরকে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারায় নিষিদ্ধ করা হবে।’

[৪] প্রধানমন্ত্রী আবারও জাতিসংঘ (ইউএন) এবং অন্যান্য দেশের কাছে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে দেশব্যাপী তাণ্ডব চলাকালীন প্রতিটি ঘটনার তদন্তে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

[৫] বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-এ স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

[৬] ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষক লীগ (বিকেএল) এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

[৭] ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন, জামায়াত ও শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে।

[৮] তিনি বলেন, ‘সবাইকে এ লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে হবে এবং আমি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।’

[৯] প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন তার জীবন নাশের প্রচেষ্টা আগের ঘটনার মতো বারবার আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু, আমি পাত্তা দিই না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন এবং তিনি তা নিয়েও নেবেন। জনগণের কল্যাণে যা যা করা দরকার আমি সবই করব।’

[১০] প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বস্ব হারিয়ে কাছের এবং প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা তিনি জানেন। তিনি বলেন, ‘সুতরাং, আমি প্রত্যেকটি জিনিসের (হত্যাযজ্ঞের) তদন্ত চাই যে, এর পিছনে কারা রয়েছে এবং কীভাবে এবং কী কী ঘটনা ঘটেছে।’

[১১] তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার সাম্প্রতিক সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যুর তদন্তের জন্য এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। পরে কমিশন গঠনের পর বিপুল সংখ্যক ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় এর পরিধি সম্প্রসারণ করে তিনজন সদস্য করা হয়।

[১২] প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নির্মিত সম্পত্তি ধ্বংস করে দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তারা আর সহ্য করবেন না।

[১৩] তিনি আরও বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য দেশব্যাপী তাণ্ডব চালানো হয়েছে।

[১৪] অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

[১৫] বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

[১৬] অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

[১৭] অনুষ্ঠান শেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদ ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

[১৮] প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন ধ্বংসস্তুপে রূপ নেওয়ার আগে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করেছে। তারা মিছিল করে যেখানে যেতে চেয়েছে, তাদের সেখানে যেতে দিয়েছে। তিনি নিজেও আইনশৃংখলা বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলেছেন।

[১৯] তিনি আমেরিকায় সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলের আগ্রসনের প্রতিবাদরত শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ওপর সরকারি সংস্থার হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমেরিকায় যেভাবে মেরে ধরে, শিক্ষকদের রাস্তার ওপর ফেলে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে হার্ড লাইনে গিয়ে আন্দোলন দমন করেছিল, তাঁর সরকার সে পথে যায়নি এবং শক্তিও প্রয়োগ করেনি। বরং তাদের দাবি মেনে নিয়েছে। আসলে তাদের দাবিটা কি? সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন হাইকোর্টে পক্ষভুক্তদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাতিল হওয়ায় সরকার আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। আপিল বিভাগ শুনানির দিন ধার্য করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছে অর্থাৎ কোটা বাতিলই ছিল। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায়ও ছাত্রদের চাহিদার চাইতে বেশিই এসেছে। আর এটাতো তাঁরই দাবি ছিল, সেখানে আন্দোলনের আর কি থাকে! সেখানে আজকে যে ঘটনাগুলো ঘটলো।

[২০] তিনি বলেন, একটা কোটা আন্দোলনের নাম দিয়ে এই ভাবে একটা নাশকতা ও জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড পরিচালনা করা ! যে জন্য তিনি ১৭ তারিখ টেলিভিশন ভাষণে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন।

[২১] প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষক ও অভিাবকদের বলেছিলাম যে, আপনাদের সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, আপনারা সন্তানদেরকে বের হতে দিয়েন না। 

[২২] তিনি বলেন, তারপরেও আজকে বাংলাদেশে এতগুলো প্রাণ যে ঝড়ে গেল এর দায় দায়িত্ব কার? একটা জিনিষ গেলে আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু জীবন গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না।



[১]আইনের প্রয়োগ হবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপর, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নয়: তথ্য প্রতিমন্ত্রী


আনিস তপন: [২] তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সরকার দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায়; সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে- তাদের ওপর আইনের প্রয়োগ ঘটবে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। কোন সাধারণ শিক্ষার্থী কোনভাবে যেনো হয়রানির শিকার না হয়, এটি আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি। 

[৩] বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

[৪] তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমরা বলেছি, যে সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে ছিলো, স্লোগান দিয়েছে, পানি বিতরণ করেছে- তাদেরকেও যেন কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়, তাদের পরিবারের কোনো সদস্য যাতে কোনভাবে নাজেহাল না হয়। 

[৫] প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। এর সঙ্গে আমাদের পুরো সমবেদনা ও সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়। 

[৬] তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বিগত দিনগুলোতে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়গুলো সরকারের জন্য, দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সবার জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং খুবই দুঃখের। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং আমি বহুবার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য নিন্দা জানিয়েছি। স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি হতাহতের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আমরা বিদেশি কোন এক্সপার্টেরও সহায়তা নেবো। এখানে আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।

[৭] মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, প্রতিটি মৃত্যুর জন্য, প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য আজ সরকার এবং বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত, দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এ মৃত্যুগুলো, ঘটনাগুলোকে ঘিরে আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং বদনাম করার এক ধরণের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তরা যেমন বিচার চান, সরকারও একইভাবে বিচার চায়। আমরা এটার গভীরে যেতে চাই এবং প্রতিটি দায়ী ব্যক্তিকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব